
ডিভোর্সের ক্ষেত্রে মেয়ের মায়েরা কেন জানে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করে
সাফওয়ানা জেরিন
ডিভোর্সের ক্ষেত্রে মেয়ের মায়েরা কেন জানে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করে!
ডিভোর্সি পাত্রী দেখতে গিয়েছি,অনেকগুলো কারনে মনে হলো সখের ডিভোর্স।জিজ্ঞেস করলাম হাজব্যান্ডের পরকীয়া ছিলো কিনা!উত্তর না।গায়ে হাত তুলতো কিনা, না!নেশা করতো কিনা?তাও না।
নামায পড়তো কিনা তার উত্তর হ্যা কারন ভদ্রলোক হুযুর।
যেহেতু বিয়ে শাদীর ব্যাপার ডিভোর্সের কারন বিস্তারিত জানা দরকার।কারন জিজ্ঞেস করলাম।বললো জামাই কিপটা।কেমন কিপটা জিজ্ঞেস করলে বললো ঈদে ঠিকমতো কাপড়চোপড় দিতো না।বাসায় ভালো বাজার সদাই করতো না!
আবার ঘুরেফিরে বললো লোকটা ফিজিক্যালি ফিট ছিলো না।অথচ একটা ৫-৬বছরের মেয়ে আছে মহিলার।লোকটা পরে বিয়ে করেছে সে ঘরেও দুটা ছেলে হয়েছে।সুখে শান্তিতে সংসার করছে।
একটা কথাও ডিভোর্সের মতো বড় সিধান্তের জন্য যৌক্তিক লাগলো না। শুনেছি তার মা খুবই নাক উচু মহিলা।মায়ের ইচ্ছায় তালাক হয়েছে।
মনে হলো ঘটনাটা অনেকটা হয়তো এমন, হয়তো লোকটার আর্থিক অবস্থা খুব ভালো ছিলোনা। অনেকের আকাঙ্ক্ষা থাকে বিয়ের পরে রাজা বাদশার হালতে চলবে, রাতারাতি সাধারণ টানাটানির জীবন থেকে বিয়ে আলাদীনের প্রদীপ হয়ে আসবে, ঘষা দিলেই যা খুশি পাওয়া যাবে।প্রতিমাসে নতুন নতুন কাপড়, গহনা পড়ে জাতে ওঠা যাবে। বাপেরবাড়ি যে কস্ট করেছে সেই কস্টের তিলপরিমাণ, বাবা মা যা দিতে পারেনাই তার জন্য এতোদিন যে সেক্রিফাইস করতে হয়েছে তার এক বিন্দু হাজব্যান্ডের সংসারে করা যাবেনা।
হাজব্যান্ডের দোষ ভাই বোন বাবা মায়ের কাছে বললে মোটামুটি অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের লোকজন সাধারণত ডিভোর্সে উৎসাহিত করে। সংসারে অশান্তি দেখলে আগুনে পানি ঢালার বদলে ঘি ঢালার মানুষের অভাব পড়েনা এই সমাজে। স্পেশালি এসব ক্ষেত্রে মেয়ের মায়েরা কেন জানে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করে!
সবাই বলবে দে ডিভোর্স আয় চলে!পড়ে আরও ভালো বিয়ে হবে এসব আশা দেখিয়ে ডিভোর্সে সবাই উৎসাহ দিবে। এরপর সংসারটা ভেংগে গেলে দেখবেন আপনার আগের হাজব্যান্ড দিব্যি সংসার করছে অন্য কারো সাথে। ভাইবোনেরাও যে যার মতো স্যাটেল,আপনি শুধু একা রয়ে গেলেন। বাচ্চাসহ নতুন করে বিয়ে করতে গেলেও শর্ত দিচ্ছে বাচ্চাকে আনতে পারবেন না।আপনিও বাচ্চা ফেলে নিজের আলাদা জীবন চাইবেন না।
মায়ের পেটের ভাইবোনদের মাঝেও ঝগড়াঝাটি, চুলাচুলি, বোঝাপড়ায় সমস্যা হয়। হাজব্যান্ড আরেক পরিবারের ভিন্ন পরিবেশের মানুষ বোঝাপড়াটা সবসময় দ্রুত নাও হতে পারে।
হাজব্যান্ড ওয়াইফের সম্পর্কে সময় যাওয়ার সাথে সাথে বোঝাপড়া বাড়ে। সেই বোঝাপড়া হওয়ার আগেই বড় কোনো কারন ছাড়া পান থেকে চুন খসতে সম্পর্ক ভাংগা ওয়াইজ ডিসিশন না। ভাংগা সহজ গড়া খুব কঠিন, স্পেশালি মেয়েদের জন্য। না পাওয়ার চেয়ে হারানোর বেদনা বেশি। একটা জলজ্যান্ত সংসার হারানোর কস্ট সহ্য করা সহজ না।অনেক দেখেছি,ঠুনকো অজুহাতে ডিভোর্স নেওয়া মেয়েরা কেন জানি পরবর্তীতে আগের হাজব্যান্ডের ভালো দিকগুলোই বারবার খুজে পায়।
সম্পর্ক ভাংগার আগে একটু দম নিয়ে চেস্টা করা ভালো। তারপরেও না হলে দরজা তো সবসময়ই খোলা।
ধরলাম একজন মহিলা, এক বাচ্চার মা হাজব্যান্ডকে তালাক দিতে চায়। তালাক দিতে চাওয়ার হাজার কারনের মাঝে একটা বড় কারন হাজব্যান্ডের থেকে ফিজিক্যালি সেটিসফাইড না হওয়া। ধরলাম তালাকটা হয়েও গেলো। এরপর দিন যায় মাস যায় কিন্ত তার আর বিয়ে হয়না। বিয়ের প্রস্তাব একেবারেই যে আসেনা তা না, কিন্ত সব প্রস্তাবেই মাস্ট একটা শর্ত বাচ্চা নিয়ে আসা যাবেনা। বাচ্চাকে নানীর কাছে অথবা বোর্ডিং স্কুলে রেখে আসতে হবে সংসার করতে হলে।কী নিম্নবিত্ত কী উচ্চবিত্ত, ডিভোর্সি মেয়েকে বাচ্চাসহ সাদরে গ্রহণ করে এমন বড় মনের মানুষ এখন হাতেগোনা।
একজন মেয়ে আর্থিকভাবে সক্ষম হলেও দিনশেষে একটা সংসার চায় একটা সংগী চায়। আর্থিকভাবে সক্ষম বাচ্চাসহ ডিভোর্সি মায়েরা হয়তো এসব শর্ত দেখে আরেকবার বিয়েই করেনা। আর যারা বাচ্চাসহ অন্য কারো উপর ডিপেন্ডেন্ট তারা কী করে? তারা যাদের উপর ডিপেন্ডেন্ট থাকে তারাও চায় মেয়েটা আবার সংসার করুক, মেয়েটাও তাই চায়।তখন তার চাওয়া থাকে শুধু তার সন্তানটার যেন নতুন সংসারে একটু যায়গা হয়। সন্তানের একটু যায়গা, একটা পরিচয়ের জন্য প্রয়োজনে ষাটোর্ধ লোককেও বিয়ে করতে তার আপত্তি থাকেনা।
এমন একটা সময় চলছে যখন অবিবাহিত মেয়েদেরই বিয়ে হয়না, সংসার হয়না।এটা এমন একটা জাহেলি অন্ধকার আচ্ছন্ন সমাজ ব্যবস্থা যেখানে বিপদে পড়া নারীর গতি করতে কেউই উঠেপড়ে লাগেনা। একটা তালাক জাস্টিফাইড হতে পারে, তার সবগুলো কারনই লজিক্যাল হতে পারে। কিন্ত তালাক পরবর্তী একটা মেয়েকে যে কঠিন বাস্তবতা আর কম্প্রোমাইজের মধ্য দিয়ে যেতে হয় এই দেশে তা নিয়ে কেউ কথা বলেনা!
মা খালাদের যুগের পরিচিত অনেককেই দেখেছি বাচ্চা ব্রোকেন ফ্যামিলির কস্ট নিয়ে বড় না হোক এই চাওয়ার জন্য অনেক মা পাওয়া না পাওয়া নিয়েই সংসার করে গেছে। তালাকে একটা মহিলা সংসার হারায়, আর একটা শিশু হারায় তার পরিবার, পরিচয়।একটা ডিভোর্সি পুরুষের জন্য মেয়ের অভাব হয়না, তার আবার নতুন একটা পরিবারের জন্য ঘুরে মরতে হয়না, এটাই বাস্তবতা।সমাধান কী? এই দেশে একটা বাচ্চাসহ একটা ডিভোর্সি মেয়ে/মা কতোটা লাচার কতোটা অপারগ তা নতুন করে লেখার কোনো দরকার আছে বলে মনে করিনা।